Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পেঁয়াজের অজৈবিক ডিজঅর্ডার দূরীকরণে উত্তম কৃষি চর্চার প্রয়োগ

পেঁয়াজের অজৈবিক ডিজঅর্ডার দূরীকরণে
উত্তম কৃষি চর্চার প্রয়োগ
ড. মো. আলাউদ্দিন খান১ ড. রুম্মান আরা২ ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত৩ মো. মুশফিকুর রহমান৪
পেঁয়াজ বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল। উৎপাদন এবং চাহিদার কারণে মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে এটি প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। দেশে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ মে. টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে ২৫-২৬ লাখ মে. টন উৎপাদন হয়ে থাকে। বার্ষিক ঘাটতি প্রায় ১০ লাখ মে. টন, যা আমদানি করতে প্রায় ৪.০-৪.৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের ডিজঅর্ডারের কারণে একদিকে যেমন- পেঁয়াজের মোট উৎপাদন কমে যায়, অন্যদিকে মানসম্পন্ন কন্দ ও বীজ প্রাপ্তিতে বাধাগ্রস্থ হয়। গাছ বা গাছের অংশ বিশেষে যে কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিকাশ বা অভিব্যক্তির ফলে স্বাভাবিক প্রত্যাশা অনুযায়ী বেঁচে না থাকতে পারাকেই গাছের ডিজঅর্ডার বলা হয়।
পরিবেশের যে কেনো জৈবিক বা অজৈবিক কারণে গাছের ডিজঅর্ডার হতে পারে। নির্জীব বস্তু বা পরিবেশের অবস্থা ও শারীরবৃত্তীয় উপাদানের (এনজাইম, সাইটোকাইনিন ইত্যাদি) ঘাটতি/আধিক্য, আবহাওয়া ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অজৈবিক ডিজঅর্ডার প্রকাশ পায়। অনেক সময় কোনো পুষ্টি উপাদানের (যেমন- ফসফরাস) ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও গাছে কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না, কিন্তু ফসলের ফলন কমে যায়। এসমস্ত ক্ষেত্রে নমুনা (উদ্ভিদ অংশ/মাটি) ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষণ ছাড়া প্রকৃত ব্যাধির ধরণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পরে। অজৈবিক ডিজঅর্ডারসমূহ  পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক কৃষি অর্জনের লক্ষ্যে উত্তম কৃষি চর্চা প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন অজৈবিক (অ্যাবায়োটিক) ডিজঅর্ডার দূরীকরণ করে পেঁয়াজের ফলন ও গুণগত মান উভয়ই বৃদ্ধি করা সম্ভব। অ্যাবায়োটিক ডিজঅর্ডারসমূহের লক্ষণ ও দূরীকরণের উপায়সমূহ নি¤েœ সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হলো।
পুষ্টিগত বা নিউট্রিশনাল ডিজঅর্ডার
নাইট্রোজেন (ঘ) : নাইট্রোজেন সালোকসংশ্লেষণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। নাইট্রোজেনের ঘাটতির কারণে পেঁয়াজের বীজতলার চারা হলুদ হয়ে যায়। নাইট্রোজেনের অভাবে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়, প্রথমে বয়স্ক (নিচের) পাতা ফ্যাকাশে সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, পরে সম্পূর্ণ গাছে এ লক্ষণ প্রকাশ পায়, ফুল আসতে বিলম্বিত হয়। কন্দ আগাম পরিপক্বতা লাভ করে ছোট হয়ে যায়। নাইট্রোজেনের আধিক্যে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয়, পেঁয়াজের গলা মোটা হয়ে যায়, কন্দ পরিপক্বতায় সময় বেশি লাগে। কন্দ নরম হয়ে যায়। গলা মোটা বা কন্দ নরমের ফলে সংরক্ষণাগারে সহজেই ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পচে যায়।
দূরীকরণের উপায় : পেঁয়াজ-এ অগভীর, অসমৃদ্ধ এবং তন্ত্রমূল থাকার কারণে গাছ কর্তৃক সহজলভ্যভাবে পরিমিত পরিমাণ পুষ্টি উপাদান প্রয়োগ যত্নসহকারে চাষ করা প্রয়োজন। পেঁয়াজের বীজতলার চারা হলুদ হয়ে গেলে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। পেঁয়াজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমির ধরন, সেচ ব্যবস্থা, ফসলের ঘনত্ব, সার প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদির অবস্থা বুঝে পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। স্বাভাবিক জমিতে হেক্টর প্রতি সাধারণত ২৩০-২৬০ কেজি ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। অতি বৃষ্টিপাতের পরে বা মাটির উপরিস্তর অন্যত্র কেটে নিলে পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। নাইট্রোজেন সার একবারে প্রয়োগ না করে ফসলের বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ে সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে, তবে চারা লাগানোর আগে মোট সারের ২৫-৩০% প্রয়োগ করা উচিত।
ফসফরাস (চ) : ফসফরাস পুষ্টি উপাদানের অভাবে মূল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হয় ফলে গাছ মাটির সাথে সহজেই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। পরিশেষে গাছের বৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যায়। ফুল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। ফসফরাসের সাথে সাথে নাইট্রোজেন ও পটাশের ঘাটতি হলে পাতা ফ্যাকাশে সবুজ হয়ে উপর থেকে নিচের দিকে মরে যায়। অতি এসিডিক (ঢ়ঐ <৫.০) এবং অ্যালকালিন/ক্যালকেরিয়াস (ঢ়ঐ>৭.৫) মাটিতে ফসফরাস এর ঘাটতি হয়ে থাকে। অ্যালুমিনিয়ামের (অষ) টক্সিন আয়ন পেঁয়াজের মূল ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে মূল পানি ও পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না। অন্যদিকে ফসফরিক এসিড মাটির আয়রন (ঋব) অক্সাইড এবং অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের সাথে ফিক্সড হয়ে গাছের জন্য ফসফরাস এর প্রাপ্যতা বন্ধ হয়ে যায়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকলেও ফসফরাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
দূরীকরণের উপায় : স্বাভাবিক মাটিতে ফসফরাসের ঘাটতি হলে প্রয়োজন মতো ফসফরাস সার ব্যবহার করতে হবে। ফসফরাস এর অভাবে স্বাভাবিক জমিতে হেক্টর প্রতি সাধারণত  ২৩০-২৬০ কেজি টিএসপি (ঞঝচ) সারের প্রয়োজন হয়।
পটাশিয়াম (ক) : পটাশ কোষে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তার মাধ্যমে পেঁয়াজ গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে পেঁয়াজ গাছের পাতা ঢলে পড়ে, পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায়। পটাশিয়ামের অতিরিক্ত ঘাটতি হলে গাছের পুরাতন পাতার আগা হলুদ হয়ে মারা যায় এবং পাতার গোড়া শুকিয়ে যায়। পরিশেষে গাছ মারা যেতে পারে। পটাশের অভাবে অনাকাক্সিক্ষত ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পটাশিয়ামের আধিক্যে গাছ কর্তৃক নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয়।
দূরীকরণের উপায় : প্রয়োজন মত পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। স্বাভাবিক জমিতে হেক্টর প্রতি সাধারণত   ৭৫-৯০ কেজি এমওপি সারের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনে পটাশিয়াম সার একবারে প্রয়োগ না করে ফসলের বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ে সারের উপরী প্রয়োগ করতে হবে, তবে চারা লাগানোর আগে মোট সারের ৩০-৫০% প্রয়োগ করা যেতে পারে। ভারী ক্লে সমৃদ্ধ মাটিতে পটাশিয়াম বন্ধন সৃষ্টি করে, ফলে পেঁয়াজ গাছ পটাশিয়াম গ্রহণ করতে পারে না। কাঠের ছাই সরাসরি সার হিসাবে ব্যবহার করে পটাশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। কোনো কারণে অতিরিক্ত চুন প্রয়োগ করলে পটাশিয়াম এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে, এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
সালফার/গন্ধক (ঝ) : সালফার এনজাইম ও আমিষের উপাদান এবং এটি ক্লোরোফিল উৎপাদনে সহায়তা করে। সালফার পেঁয়াজের ঝাঁঝ বৃদ্ধির প্রধান উপাদান। তাছাড়া সালফার পেঁয়াজের ফলন এবং খোসার  রং ও শক্তি বৃদ্ধি করে। সালফার ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধের সহায়ক। পেঁয়াজের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সালফার এর ঘাটতি হলে পেঁয়াজের নতুন (উপরের) পাতা সমভাবে হলুদ হয়ে যায় এবং গাছের পাতার সংখ্যা কমে যায়। সালফার এর অভাবে ধীরে ধীরে গাছের বৃদ্ধি হয় এবং ঘাটতি বেশি হলে পেঁয়াজের ফলন ও মান উভয়ই কমে যায়। পেঁয়াজের জমির মাঝে মাঝে ঘাটতিজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। সালফার এর ঘাটতি হলে গাছ ভালোভাবে ঘ, চ এবং ক গ্রহণ করতে পারে না।
দূরীকরণের উপায় : বর্তমানে উচ্চফলনশীল ফসল চাষাবাদের কারণে জমিতে সালফার এর ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। তাই প্রয়োজন মতো সালফার সারসহ জৈব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টর প্রতি সাধারণত ১১০-১৬৫ কেজি জিপসাম সারের প্রয়োজন হয়। জমি দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকলে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব পদার্থ এবং সালফার সার প্রয়োগ করে পেঁয়াজ চাষ করতে হবে।
ক্যালসিয়াম (ঈধ) : মূল ও গাছের বৃদ্ধিসহ গাছের জীবনীশক্তি বৃদ্ধিতে ক্যালসিয়াম সহায়তা করে থাকে। পেঁয়াজের কন্দকে বিভিন্ন প্রকার রোগ ও লবণাক্ততা থেকে রক্ষা করে। বীজের গুণগত মান বৃদ্ধি করে ও পেঁয়াজের কন্দের সংরক্ষণক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে পেঁয়াজের নতুন পাতা হলুদ হওয়ার আগেই উপরের থেকে নিচের দিকে মরে যায়, পরিশেষে পাতার ডগা ভেঙে যায়। অধিক অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত এসিডিক এবং অধিক সোডিয়াম যুক্ত লবণাক্ত মাটিতে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হয়ে থাকে। বেলে মাটিতে সহজেই চুয়ানোর ফলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়ে থাকে।
দূরীকরণের উপায় : অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য সোডিয়ামের প্রতি সহনশীল/প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করে চাষ করতে হবে। সোডিয়াম যুক্ত জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা অনুযায়ী জিপসাম (ক্যালসিয়াম সালফেট) প্রয়োগ করেও পেঁয়াজ চাষ করা যেতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম : এটি ক্লোরোফিল গঠনে সহায়তা করে থাকে এবং সংরক্ষণাগারে পেঁয়াজের পচনের হার কমিয়ে সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর অভাবে গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়, পুরনো পাতার সম্পূর্ণ অংশ সমভাবে হলুদ হয়ে যায়, যা নাইট্রোজেন ঘাটতিজনিত লক্ষণের মতো মনে হতে পারে।
দূরীকরণের উপায় : জমিতে ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ খুব কম থাকলে চারা রোপণের আগে হেক্টর প্রতি সাধারণত ৩৫-৫০ কেজি ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড সারের প্রয়োজন হতে পারে।  বেলে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ এবং হেক্টরপ্রতি ১০০-১৫০ কেজি ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড প্রয়োগ করতে হবে।
বোরন (ই) : বোরন পেঁয়াজের বীজের ফলন এবং গুণগত মান উভয়ই বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বোরন সারের ঘাটতিতে নতুন পাতা গাঢ় সবুজ বা বিভিন্ন বর্ণে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং পুরনো (নিচের) পাতার উপরের অংশ ফ্যাকাশে বা বিবর্ণ রং ধারণ করে, পরে ভঙ্গুর হয়ে ফাটলের সৃষ্টি হয়। গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয় এবং পেঁয়াজের মূল, পাতাসহ গাছ মোচড়িয়ে বিকৃত হয়ে যায়। বোরন এর অভাবে ফুলের দ- গোল আকারে ফেটে গিয়ে ভেঙে যেতে পারে। এই উপাদানের অতিরিক্ত ঘাটতিতে বীজের গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়ে অধিকাংশ বীজ চিটা হয়ে যেতে পারে।
দূরীকরণের উপায় : স্বাভাবিক মাটিতে এই উপাদানের ঘাটতি হলে হেক্টর প্রতি সাধারণত ৭.৫-৯.৫ কেজি সোলিউবোর সার চারা লাগানোর আগে ব্যবহার করতে হবে। জমিতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন এবং ক্যালসিয়াম থাকলে বোরন প্রয়োগ করে সমন্বয় করতে হবে। ফসলকে বোরনের টক্সিসিটি থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই পরিমাণ মতো বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে।
জিঙ্ক/দস্তা (তহ) :  জিঙ্ক এর অভাবে নতুন পাতা হলুদ ও গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। গাছ মোচড়িয়ে বিকৃত হয়ে যায় এবং পাতা ঢলে পড়ে। কন্দ/বীজের ফলন ও গুণগত মান কমে যায়। অতিরিক্ত জিঙ্ক সার প্রয়োগ করলে পেঁয়াজের ফসলে টক্সিসিটি দেখা দেয় এবং পাতা হলুদ হয়ে যায়।
দূরীকরণের উপায় : মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনে হেক্টর প্রতি ১৫-১৭ কেজি জিঙ্ক সালফেট সার চারা লাগানোর আগে প্রয়োগ করতে হবে।
কপার/তামা (ঈঁ) : কপার এনজাইমের একটি উপাদান। পর্যাপ্ত কপার পেঁয়াজের ছাল/খোসার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং কন্দের রং উজ্জ্বল করে। কপারের অভাবে পাতার ডগা বাদামি বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যায় ও ভেঙ্গে পড়ে এবং পেঁয়াজের খোসা পাতলা হয়ে যায়।
দূরীকরণের উপায় : প্রতি লিটার পানির সাথে ৩ গ্রাম কপার সালফেট মিশিয়ে চারা রোপণের ৩০ এবং ৪৫ দিন পর স্প্রে করলে কপারের ঘাটতি মেটানো সম্ভব।
লোহা/আয়রণ (ঋব) : এটি সালোকসংশ্লেষনে এবং ক্লোরোফিল গঠনে সহায়তা করে থাকে। পেঁয়াজের ফলন ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে। গাছে অত্যধিক লোহার অভাবে পেঁয়াজ পাতা সম্পূর্ণভাবে ফ্যাকাশে বা বিবর্ণ (ক্লোরোসিস) এবং সাদাটে বা শ্বেতবর্ণ হয়ে যায়। অধিক এসিডিক এবং অ্যালকালিন/ক্যালকেরিয়াস মাটিতে লোহার ঘাটতি হয়ে থাকে। অধিক ঈঁ, গহ এবং তহ সমৃদ্ধ মাটিতেও লোহার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
দূরীকরণের উপায় : লোহার প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য অতি অ্যালকালিনসমৃদ্ধ মাটিতে জৈব পদার্থ বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে অতিরিক্ত এসিড মাটিতে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে।
ম্যাঙ্গানিজ (গহ) : ম্যাঙ্গানিজ ঘাটতির প্রতি পেঁয়াজ খুবই সংবেদনশীল। গাছের বৃদ্ধি ধীর গতিতে হয়ে থাকে।  নতুন পাতার শিরার মধ্যবর্তী অংশ হলুদ (ক্লোরোসিস) হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ডগা পোড়া রোগে পরিণত হয়। মোটা গলা বিশিষ্ট পেঁয়াজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কন্দ পরিপক্বতায় সময় বেশি লাগে।
দূরীকরণের উপায় : ম্যাঙ্গানিজ সালফেট পেঁয়াজের জমিতে (হেক্টর প্রতি ৪০-৫০ কেজি) অথবা পাতায় প্রয়োগ করে ইহার ঘাটতি মেটানো যায়। তবে পাতায় স্প্রে করাই উত্তম। প্রতি লিটার পানিতে ৮ গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ সালফেট মিশিয়ে চারা রোপণের ৩০ এবং ৪৫ দিন পর পাতায় স্প্রে করলে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।
মলিবডেনাম (গড়) : গাছ কর্তৃক নাইট্রোজেন গ্রহণে এই সার সহায়তা করে থাকে। এর ঘাটতি হলে পেঁয়াজ গাছ তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আমিষ/ক্লোরোফিল তৈরি করতে পারে না, ফলে গাছের বৃদ্ধি হয় না। গাছ ঢলে পড়ে। শিরার মধ্যবর্তী পাতা ফ্যাকাশে সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ (নাইট্রোজেন ঘাটতিজনিত লক্ষণের মতো) ধারণ করে। এর অভাবে বীজতলা থেকে বীজ গজিয়ে উঠতে বাধাগ্রস্ত হয় এবং পরিশেষে পেঁয়াজের চারা মারা যায়। অধিক এসিডিক এবং বেলে মাটিতে মলিবডেনাম এর ঘাটতি হয়ে থাকে।
দূরীকরণের উপায় : অতিরিক্ত এসিড মাটিতে ডলোচুন/ডলোমাইট প্রয়োগ করে মাটির ঢ়ঐ বাড়াতে হবে। বেলে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জেব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে। পাতায় মলিবডেনাম স্প্রে করে ঘাটতি মেটানো হয়।
শারীরবৃওীয় বা ফিজিওলজিক্যাল ডিজঅর্ডার
পেঁয়াজের বীজ অপুষ্ট/চিটা হওয়া, ঝরে পড়া এবং বীজের অঙ্কুরোদগমে ব্যর্থতা দূরীকরণের উপায় : পেঁয়াজের বীজের অঙ্কুরোদগমের আদর্শ হার ৭০%। বীজ উৎপাদন, মাঠ থেকে কদম কর্তন এবং সংগ্রহ পূর্ব এবং সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা যথোপযুক্ত হলে অঙ্কুরোদগমের হার ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। সঠিক উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়াও একটি কদমে পেঁয়াজের প্রায়  ১৫-২৫% বীজফল ফেটে কালো দানা দেখা গেলে সম্পূর্ণ কদমটি কর্তনের জন্য বিবেচনা করা হয়। পেঁয়াজের জমিতে একসাথে পরিপক্ব ফলের কদম কর্তন করা সম্ভব হয় না। এই জন্য পেঁয়াজের জমির সমস্ত কদম কর্তন করতে ৩-৪ কিস্তি লাগতে পারে। বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে কমপক্ষে ৬-৮% আর্দ্রতা বজায় রেখে ঠা-া করে অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল বা দ্বিস্তর বিশিষ্ট পলিথিন প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হয়।
রোপণকৃত চারা ঢলে পড়া দূরীকরণের উপায় : চারার আগা বা ডগা থেকে কিছু অংশ ছেঁটে ফেলে দিয়ে রোপণ করলে রোপিত চারা গাছ থেকে পানির অপচয় কম হবে এবং সহজেই মাঠে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুস্থ সবল পেঁয়াজ গাছ উৎপাদন হবে।
অনাকাঙ্খিত ফুল উৎপাদন (বোলটিং) :  কন্দ উৎপাদনের সময় সঠিকভাবে কন্দের বিকাশ অথবা পরিপক্বতার আগেই অনাকাক্সিক্ষতভাবে বোলটিং (ফুলের দ-) হলে তা সঠিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য মোটেই ভালো নয়। এর প্রভাবে কন্দের আকার এবং পেঁয়াজের ফলন ও গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
দূরীকরণের উপায় : তুলনামূলকভাবে কম বোলটিং বা বোলটিং মুক্ত ও ভালো মানের পেঁয়াজের জাত ব্যবহার করতে হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পরে বীজ বপন করলে বোলটিং কম হবে। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন এবং সুস্থ সবল হলে বোলটিং কম হবে। পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে সহজে বোলটিং হয় না। এটেল-দোআঁশ মাটিতে তুলনামূলকভাবে বোলটিং কম হয়। মুড়িকাটা (ছোট কন্দ থেকে পেঁয়াজ চাষ) পেঁয়াজে সবচেয়ে বেশি বোলটিং হয় এবং সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে বোলটিং সবচেয়ে কম হয়। বোলটিং হলে দেখামাত্র তা ভেঙে ফলতে হবে।
কন্দ থেকে গাছ গজানো (স্প্রাউটিং) : স্প্রাউটিং (ঝঢ়ৎড়ঁঃরহম) হলো সংরক্ষণকৃত কন্দ হতে পেঁয়াজের নতুন গাছ জন্মানোর এক প্রকার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। স্প্রাউটিং প্রতিরোধী বা কম স্প্র্রাউটিং সমৃদ্ধ জাতের ব্যবহার করতে হবে। পেঁয়াজ সংগ্রহের কমপক্ষে ২০ দিন পূর্বে পানি ও নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। উপযুক্তভাবে পরিপক্ব হলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কন্দ সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহের পর কন্দ হালকা ছায়ায় পাতাসহ ৫-৭ দিন কিউরিং এবং কন্দের উপর থেকে ২.০-২.৫ সেমি গলা কেটে সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। পেঁয়াজকে উচ্চতাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে রক্ষার জন্য সংরক্ষণাগারের চারিদিক থেকে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। সংরক্ষণাগারের টিনের চালের নিচে ইনসুলেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। সংরক্ষণাগারে স্তূপীকৃত পেঁয়াজের উচ্চতা ৩০-৪৫ সেমির (১২-১৮ ইঞ্চি) বেশি না হওয়াই ভালো।
বিভাজিত কন্দ : কন্দ ২ বা ২ এর অধিক ভাগে বিভাজন হওয়ার প্রক্রিয়াকে কন্দের বহুবিভাজন বলে । মূলত ২টি ভাবে কন্দ বিভাজিত হয়ে থাকে। ক. জাত ভেদে। খ. কন্দের তলদেশীয় প্লেট ফেটে পার্শ্বীয় গাছ উৎপাদন হয়। ভালো মানের বীজ ব্যবহার করে চারা তৈরি করে রোপণ করতে হবে। জমির প্রত্যেক স্থানে পরিমাণমত সেচ ও সার প্রয়োগ করা যাতে গাছের অসম বৃদ্ধি না হয়। একই বয়স বা আকারের চারা তুলনামূলকভাবে একটু গভীরে উপযুক্ত দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
অন্যান্য ডিজঅর্ডার
কৌলিতাত্তিক মিউটেশন : কোনো কোনো সময় মাঠে পেঁয়াজের পাতার এবং কন্দের রঙের কৌলিতাত্তিক মিউটেশন হতে পারে। মিউটেশনের মাধ্যমে পাতার দৈর্ঘ্য বরাবর ক্লোরোফিলের ঘাটতি হয়ে সাদা থেকে হলদেসহ বিভিন্ন রঙ ধারণ করে থাকে, যা দেখতে মোজাইকের মতো মনে হয়। অনেক সময় মিউটেশনের মাধ্যমে লাল রঙের পেঁয়াজ সাদা হয়ে যায়। এ ধরনের ডিজঅর্ডার তীব্র হলে গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশ হ্রাস পেতে পারে। কৌলিতাত্ত্বিক মিউটেশন যুক্ত গাছের কন্দ থেকে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা যাবে না।
আগাছানাশক প্রয়োগজনিত ক্ষত : অসময়ে অতিরিক্ত মাত্রায় আগাছানাশক স্প্রে করার কারণে পেঁয়াজের পাতায় ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে বা পাতা হলুদ হয়ে যেতে পারে, যাকে ফাইটোটক্সিসিটি বলা হয়। ফাইটোটক্সিসিটির মাত্রা তীব্র হলে পাতার ডগা হলুদ হয়ে টিপ বার্ণে পরিণত হতে পারে, এমনকি পাতা কোঁকড়িয়ে যেতে পারে। পরিশেষে গাছের বৃদ্ধি  হ্রাস পেয়ে ফলন কমে যেতে পারে। প্রতিটি হার্বিসাইডের মোড়কের নির্দেশনা মোতাবেক উপযুক্ত পরিবেশে ফসলের সঠিক বৃদ্ধি পর্যায় এবং সঠিক মাত্রায় হার্বিসাইড স্প্রে করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : পেঁয়াজ সাধারণত ৫-৭ মাত্রার চঐ জমিতে ভালো হয়ে থাকে। মাটির চঐ ৫.৫ এর নিচে হলে পরিমাণ মতো হেক্টরে ৪০০-৪৫০ কেজি ডলোচুন/ডলোমাইট (ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট) ও সালফার প্রয়োগ করে চঐ বাড়াতে হবে।
বেলে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সহজেই অপচয় হয়। তাই বেলে মাটিতে ব্যাপক হারে হেক্টরে ৩০০০-৫০০০ কেজি জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
অতি এসিডিক, অ্যালকালিন/ক্যালকেরিয়াস এবং বেলে মাটিতে বোরন/ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়ে থাকে। অপরদিকে অতিরিক্ত বোরন/ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের আধিক্যে গাছের টক্সিসিটির সৃষ্টি হয়।

লেখক : ১প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর; ২প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর; ৩মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, বগুড়া; ৪বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর। মোবাইল : ০১৭১১৫৭৩৩৬১, ই-মেইল : khanalauddinsrsc@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon